(Book Review) নৌকা ডুবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


বই পড়া ভারি মজা-

বুক রিভিউ

নৌকাডুবি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রিভিউ লিখেছেন : Mariom Akter Shamoly

নৌকাডুবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি

উপন্যাস। রবি ঠাকুরের সমস্ত রচনার মধ্যে

একরকমের পরাবাস্তবতা কাজ করে। বাস্তব

জীবন, মানবের জীবন যুদ্ধ এইগুলো যেন

রবিঠাকুরের রচনায় অনাহুত। তাঁর রচনার মূল

উপজীব্য থাকে প্রকৃতি প্রেম, প্রকৃতির অপার

সৌন্দর্যের বিমোহিত করা বর্ণনা,মানব

মানবীর প্রেম,মানুষে মানুষে সম্পর্কের জটিল

সমীকরণ,মানুষের মনোজগতের জটিল

গতিবিধির বর্ণনা। তাঁর রচনার চিরায়ত নিয়ম

মেনেই যেন,রচিত হয়েছে এই উপন্যাসটি।

এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র রমেশ পেশায়

একজন আইনজীবি।হেমনলিনীর সাথে তার

ভাষাহীন অব্যক্ত প্রণয়। কেউ কাউকে কিছুই

বলেনি তবু তাঁরা দুজনেই জানে দুজনের মনের

কথা। হৃদয়ঘটিত এরম জটিল সমীকরণের মধ্য

দিয়ে জীবনের কোনো না কোনো সময় যেতে

হয় সকল মানব মানবীকে কিন্তু তা চিরকালই

থাকে অপ্রকাশিত এই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি

রবি ঠাকুর আমাদের জানিয়েছেন রমেশ আর

হেমনলিনীর চরিত্র অংকনের মধ্য দিয়ে।

রমেশ তার পিতার কঠিন শাসনের চাপে

গ্রামে গিয়ে অন্যত্র বিবাহ করতে বাধ্য হয়।

বিবাহ শেষে নববধূ নিয়ে ফেরার পথে ঘটে

নৌকাডুবি।কনেযাত্রীর অন্যান্য সদস্যদের

সাথে নিজের পিতা এবং শ্বাশুড়িকে

হারিয়ে রমেশ পদ্মার চরে খুঁজে পাওয়া

নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফেরে। যখন সে

হেমনলিনী থেকে মন ছুটিয়ে নিজের বিবাহিত

স্ত্রীকে নিয়ে সংসার সাজানোর জন্য

মনস্থির করে তখনি হঠাৎ তার সামনে আসে

একটি নিষ্ঠুর সত্য, পদ্মা চরে সে যাকে খুঁজে

পেয়েছে সে তার পরিণীতা নয়। অন্যকোন

বরযাত্রীর ডুবন্ত নৌকার নববধূ। এইখানেই এই

উপন্যাসের ক্লাইমেক্স।

মানুষে মানুষে সম্পর্ক,মানব মনের হঠাৎ

বদল,মায়া মমতা,হৃদ্যতা,নিষ্ঠুরতা এইসব যেন

রবিঠাকুর সুনিপুণ হাতে গাঁথা মালার মত

গেঁথেছেন তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি নৌকাডুবি

উপন্যাসে।

এই উপন্যাসে কমলা চরিত্রটি যেন মায়াবতী

বাঙালী নারীর চিরায়ত রূপ। ভ্রমণে হঠাৎ

পাওয়া তার ই কাছাকাছি বয়সের কিশোর

উমেশের প্রতি কমলার যে মমতা তা প্রমাণ

করে নারীরা যে বয়সীই হোক তার ভেতরে

প্রথমে জাগে মাতৃত্ব।

রবি ঠাকুর তাঁর রচিত নারী চরিত্রগুলোকে

সবসময় ই অংকন করেছেন অতিমাত্রায়

পতিভক্ত , প্রেমময়ী রূপে তার ই

ধারাবাহিকতায় নৌকাডুবির কমলাকে আমরা

দেখতে পাই, অন্ধ পতিভক্ত এক বাঙালী

রমনীরূপে।উপন্যাসের শেষের দিকে কমলা যখন

ঘটনাচক্রে পরিচয় গোপন করে তার স্বামী

নলিনাক্ষের গৃহে অবস্থান করে,তখন সে

গোপনে স্বামীর খড়ম জোড়া মাথায় নিয়ে

সম্মান জানায়।এইখানে রবি ঠাকুরের সাথে

আমার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে।

কেন বাপু! স্বামীকে সম্মান আর ভালোবাসা

দেখাতে হলে তাঁর পাদুকা কেনো মাথায়

নিতে হবে? পাদুকা মুছে পরিষ্কার করে

আলমারীতে রেখে দিলেওতো যত্ন আর

ভালোবাসা হয়,হয়না?সে যাই হোক রবি ঠাকুর

বেঁচে থাকলে হয়ত এ উত্তর পাওয়া যেত এখন

আর কেইবা দিবে এ প্রশ্নের উত্তর।

রবিঠাকুর আসলে নারীবাদী ছিলেন না,

ছিলেন প্রেমবাদী তিনি তাঁর চোখে নারীকে

দেখেছেন প্রেমময়ী, মাতৃরূপী, মায়াবতী,

মমতাময়ী রূপে।যে রূপে তিনি তাদের

দেখেছেন সে রূপে এঁকেছেন তাঁর নারী

চরিত্রের রূপ।

এই উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আমার মনে

হয়েছে,রবিঠাকুর তাঁর সময়কার বা যুগ পেরিয়ে

উত্তর আধুনিক যুগের সমস্ত মানুষের হৃদয়

বিশ্লেষণ করতে এবং ব্যাখ্যা করতে এক অনন্য

জ্যোতিষী।

মানব হৃদয়, মানব প্রেম, প্রকৃতি প্রেম,

অন্তর্দৃষ্টি মেলে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে দেখতে

বুঝতে রবি ঠাকুর অধ্যয়ন করা অত্যাবশ্যক।

=====


Download link: “নৌকা ডুবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf” 

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form